কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

ইয়াবা হটিয়ে আইসের দাপট

দেশে মাদকাসক্তের বড় অংশ ইয়াবা সেবন করে আসছিল। সেই ইয়াবার জায়গায় এখন আধিপত্য বিস্তার শুরু করেছে ‘ক্রিস্টাল আইস’ নামের আরো শক্তিশালী মাদক। চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত বছর জব্দ হওয়া ইয়াবা ও আইসের তথ্য পর্যালোচনায় এই চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।

গত বছর র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামে ইয়াবা জব্দ করে ৫৩ লাখ ৩৫ হাজার আর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) জব্দ করে চার লাখ ৮৬ হাজার পিস। দুই সংস্থার মোট জব্দের পরিমাণ ৫৮ লাখ ২১ হাজার পিস। অন্যদিকে এই সময়ে একই অঞ্চল থেকে র‌্যাব, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং বিজিবি জব্দ করেছে ২১ কেজি আইস। এই হিসাবে আইস মাত্র এক বছরেই ইয়াবার বাজার অন্তত এক-তৃতীয়াংশ দখল করেছে। তবে র‌্যাব-৭ ও ডিএনসি ছাড়া অন্য বাহিনীর জব্দ করা ইয়াবার পরিমাণ যুক্ত হয়নি এই হিসাবে।  আগের বছর, ২০২০ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কোনো আইস  পাওয়া যায়নি।

ডিএনসি বলছে, জব্দকৃত আইসের পরিমাণের ভিত্তিতে এটি ইয়াবার বাজারে কতটা প্রভাব ফেলেছে, সেই ধারণা স্পষ্ট পাওয়া যাবে না। কারণ যে পরিমাণ আইস ধরা পড়েছে, তার চেয়ে যে বেশি পাচার হয়েছে—এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। ফলে ইয়াবার বাজারে আইস আসন পোক্ত করছে, এটা নিশ্চিতভাবে বলা গেলেও কত শতাংশ বাজার দখল করেছে, তা এখনই বলা  যাচ্ছে না।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিয়ানমার দিয়ে ‘ইয়াবা রুট’ ধরে আইস পাচার শুরুর বছরেই এই দ্রব্য দেশে ৪০ শতাংশ মাদকের বাজার দখল করে ফেলেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ইয়াবার বাজার আইসের দখলে চলে যাবে। এতে মাদকাসক্তরা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশের প্রচুর মুদ্রা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর হাতে চলে যাবে। কারণ মিয়ানমারে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোই এখন সর্বাধিক মাদক উৎপাদন এবং বিভিন্ন দেশে পাচার করছে।

এর সঙ্গে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর একটি অংশও জড়িত। বর্তমানে দেশটিতে সেনাশাসন চলছে। সরকার বিদ্রোহী দমনে তৎপর। মাদক দমনে কার্যত কোনো কাজই করছে না ওরা। এই সুযোগে বিদ্রোহী গ্রুপগুলো বেপরোয়া হয়ে মাদক পাচারে জড়িয়েছে।

ডিএনসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রথমবারের মতো আইস জব্দ করে র‌্যাব। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪০ গ্রাম আইসসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর ৩ মার্চ টেকনাফ থেকে দুই কেজি আইস জব্দ করে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপর বছরজুড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২২টি অভিযানে ২১ কেজি ১১ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। এসব অভিযানে রোহিঙ্গাসহ গ্রেপ্তার হয় ৩৮ বহনকারী।

জব্দকৃত আইসের সঙ্গে ইয়াবার তুলনামূলক আলোচনায় ডিএনসির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার বলেন, ‘১০০টি ইয়াবার গড় ওজন ১০ গ্রাম। প্রতিটি ইয়াবায় মেথাফিটামিনের গড় পরিমাণ ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে ১০০টি ইয়াবায় মেথাফিটামিন থাকে এক গ্রাম। আর কাচের মতো ধবধসে সাদা পাউডারজাতীয় এক গ্রাম আইসে মেথাফিটামিন থাকে ৯০ শতাংশের বেশি। এক কেজি আইস দিয়ে প্রায় এক লাখ ইয়াবা উৎপাদন সম্ভব। অর্থাৎ জব্দকৃত ২১ কেজি আইস দিয়ে অন্তত ২১ লাখ ইয়াবা উৎপাদন সম্ভব।’

ইয়াবার স্থান আইসের দখলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একসময় বাংলাদেশের মাদকাসক্তরা ফেনসিডিল বেশি গ্রহণ করত। পরে ইয়াবা এসে ফেনসিডিলের বাজার দখল করে। এখন ইয়াবার চেয়েও কড়া মাদক আইস এসে ইয়াবার বাজার দখল করছে। কারণ মাদকাসক্তরা একই মাদক ধারাবাহিকভাবে গ্রহণ করে না। তারা নতুন মাদকের প্রতি আসক্ত হয়।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদের নির্ঘুম রাখতে আইসের উৎপাদন শুরু হয়েছিল।

পাঠকের মতামত: